মেয়েদের হরমোনাল সমস্যার মধ্যে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রম অন্যতম। সংক্ষেপে PCOS বলা হয়। এর ফলে প্রতি মাসে ওভারি থেকে ডিম্বাণু নির্গমন হয় না অর্থাৎ এনুভুলেশন (ডিম্বস্ফুটনের সমস্যা) হয়। সেই সাথে নানা রকম জটিলতা দেখা যায়, যেমন- অনিয়মিত মাসিক, অতিরিক্ত ফেসিয়াল হেয়ার গ্রোথ, কন্সিভ করতে সমস্যা হওয়া ইত্যাদি। নিয়মিত শরীরচর্চা ও সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে এটাকে অনেকটাই কন্ট্রোল করা সম্ভব। পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রম (পিসিওএস) থাকলে কেমন ডায়েট চার্ট মেনে চলতে হবে, সেটা অনেকেই হয়তো জানেন না। এ সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবনের সাথে সাথে সঠিক ডায়েট প্ল্যান মেনে চলা উচিত। চলুন তাহলে জেনে নেই এর কারণগুলো কী কী এবং কোন কোন খাবার আপনার ডায়েট চার্টে রাখা প্রয়োজন! পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রম (পিসিওএস) এর কারণগুলো জেনে নিন পিসিওএসে মেয়েদের স্ত্রী হরমোনের মাত্রা কমার পাশাপাশি পুরুষ হরমোনের মাত্রা বাড়তে থাকে। পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রম এর প্রভাবে শরীরে মারাত্মক ক্ষতিকর কোন সমস্যা হয় না, তবে এটি শরীরে হরমোনের ভারসম্য নষ্ট করে। এর ফলে প্রতি মাসে ওভারি থেকে ডিম্বাণু নির্গমন হয় না, এই ডিম্বাণুগুলো ওভারিতে পানির থলে বা সিস্ট তৈরি করে ওভারির চারপাশে জমা হয়। এর পেছনের কারণগুলো হল- অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও অতিরিক্ত মানসিক চাপ জিনগত কারণ অতিরিক্ত শারীরিক ওজন শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি। কোন কোন খাবার আপনার ডায়েট চার্টে রাখা প্রয়োজন

ফলিক অ্যাসিড

ফলিক অ্যাসিড ফিমেল রিপ্রোডাক্টিভ অরগ্যান সুস্থ রাখতে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। ইনফার্টিলিটি রোধ করতে এটি কার্যকর। তাই আপনি যদি পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রমে ভুগে থাকেন, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকাতে ফলিক অ্যাসিড যোগ করে নিন। পালং শাক, কলমি শাক, কলিজা, সবুজ শাক, ব্রকলি, বাঁধাকপি, ডিম, বাদাম, পনির এগুলোতে ফলিক অ্যাসিড আছে। আমিষ উচ্চ আমিষসমৃদ্ধ খাদ্য পিসিওএস রোগীদের জন্য খুবই প্রয়োজন। যেমন- মুরগির মাংস, মাছ, ডিম, দুধ, দই, ডাল ইত্যাদি। প্রতিদিনের ডায়েট চার্টে প্রোটিন রাখতেই হবে। একবারে বেশি করে না খেয়ে ছয়টি ভাগে মিল টাইম ভাগ করে নিতে পারেন। উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার বিপাকক্রিয়াকে সচল রাখে এবং এটিকে বলা হয় শরীরের ফুয়েল সোর্স (fuel source)!

 

হাই ফাইবার ফুড

সবুজ শাক সবজি, বেরি জাতীয় ফল, আপেল, কলা, মিষ্টি কুমড়া, ব্রকলি, পাকা আম ইত্যাদি ফাইবার যুক্ত খাদ্য পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রমে ভোগা নারীদের অবশ্যই গ্রহণ করা উচিত। এসব খাবার শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এটি ব্লাডে সুগারের ইমপ্যাক্ট কমাতে হেল্প করবে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আঁশ আমাদের শরীরের জন্য খুবই দরকারি। তাই আপনার রেগুলার ডায়েটে এই খাবারগুলো রাখুন।

ভিটামিন বি-১২ ভিটামিন বি-১২ পিসিওএস রোগীদের প্রজননক্ষমতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। এটি এক ধরনের ওয়াটার স্ল্যুবল ভিটামিন, প্রতিদিনের ডায়েটে এটি রাখা উচিত। মূলত প্রাণীজ খাবারে পাওয়া যায়, যেমন- ডিম, ছোট মাছ, সামুদ্রিক মাছ, মাংস, কলিজা, দুধ ইত্যাদি। অবশ্যই ভালোভাবে রান্না করে খেতে হবে, না হলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমন হতে পারে। কোন খাবারগুলো বর্জন করা উচিত তেলে ভাজা খাবার, প্রসেসড ফুড যেমন- সসেস, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয়, কোল্ড ড্রিংকস, কেক, পেস্ট্রি এই জাতীয় খাবার আপনার ওজন বাড়ানোর সাথে সাথে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে। পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রম (পিসিওএস) থাকলে একদমই এড়িয়ে চলবেন এগুলো। ইদানীং ইয়াং জেনেরেশনের অনেক মেয়েরাই সিগারেটে অভ্যস্ত হচ্ছে, যেটার পরিনতি ভয়াবহ। নিকোটিন প্রজননক্ষমতা কমিয়ে দেয়ার পরোক্ষ একটি কারণ। এই ধরনের অভ্যাস থাকলে, সেটা পরিহার করে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে আসতে হবে। পিসিওএস কন্ট্রোলে রাখতে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রার কোনো বিকল্প নেই।

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রম (পিসিওএস) থাকলে ডায়েট চার্ট কেমন হওয়া উচিত সেটা জানা হয়ে গেলো। প্রচুর পানি পান করুন, মৌসুমি ফলমূল গ্রহন করুন, নিয়মিত ব্যায়াম করে শরীর ফিট রাখুন। ১৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী নারীদের এই সমস্যা হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে, এটা বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণও বটে। তাই মাসিক নিয়মিত না হলে চেকআপ করাতে ভুলবেন না, ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন এবং নিয়মমতো স্বাস্থ্যকর খাবার খান। ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।